বিজ্ঞানসম্মত বিচার-বিবেচনা (Scientific Reasoning)
অনির্বাণ কুণ্ডু
ও
পার্থ ঘোষ
অনুবাদ: সুনন্দ পাত্র
মূল ছবি: Miguel Á. Padriñán ও EKATERINA BOLOVTSOVA |
বোঝা গেল—বিজ্ঞান পরীক্ষানিরীক্ষার ওপর নির্ভর করে। কোনো তত্ত্বের বৈধতা—শেষ অবধি—কোনো পরীক্ষার ফলই নিরূপণ করে। কোনো তত্ত্ব যতই আপাত-সুন্দর হোক না কেন, তা যদি তথ্য-সমর্থিত না হয়, তবে তাকে হয় বাদ দিতে হয়, নইলে অন্তত বদলাতে হয়। দু-ভাবে এটা করা যেতে পারে:
কিছু পরীক্ষা সঞ্চালন করা হল, তার থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেল, আর সেই প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি তত্ত্ব খাড়া করা হল। এর একটা খুব ভালো উদাহরণ হল—ডেনমার্কের জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে-র সঙ্কলিত তথ্যসমূহ—যার সাহায্যে কেপলার প্রথম তাঁর গ্রহের গতির নকশা (Model) নির্মাণ করেন, আর তারপর নিউটন, তাঁর মহাকর্ষ-তত্ত্ব। একইভাবে, বিভিন্ন গ্যাসের বর্ণালী-বিশ্লেষণের ফলে পারমাণবিক নকশা তৈরি হয়েছিল। সযত্ন পর্যবেক্ষণ আর তার যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা-ও এই শ্রেণীর অন্তর্গত। বিভিন্ন মহাদেশের ম্যাপের অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণের ফলেই ভেগেনার তাঁর ‘মহাদেশীয় প্রবাহ’ (Continental Drift) তত্ত্বে উপনীত হন।
একটা তত্ত্বের নকশা (Model) খাড়া করা হল। পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই না করা পর্যন্ত এই তত্ত্ব, নকশা-র পর্যায়েই থাকবে। তারপর সেই নকশা-র যাচাই-বাছাই হবে গবেষণাগারে। পরীক্ষালব্ধ তথ্য, এই তত্ত্বকে সমর্থনও করতে পারে, নাকচ-ও করতে পারে। এই শ্রেণীর একটা উদাহরণ হল—স্ট্যান্ডার্ড মডেল (Standard Model)—জগতের সমস্ত প্রাথমিক কণাদের গতি-প্রকৃতির ব্যাখ্যায় এখনো অবধি স্বীকৃত তত্ত্ব। প্রথমে মডেল (নকশা) তৈরি হয়েছিল, তারপর অগুণতি পরীক্ষার সাহায্যে তা প্রমাণিত হয়। এখন এটি প্রাপ্তবয়স্ক তত্ত্বই বটে, কিন্তু ওই ‘মডেল’ কথাটা নামের সঙ্গে সেঁটে থেকে গেছে।
সদ্য আবিষ্কৃত মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এর আরেকটা উদাহরণ। শতবর্ষ আগে আইনস্টাইন এর অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, কিন্তু এই সবে, কিছুদিন আগে, অভাবনীয় নির্ভুল এক পরীক্ষার থেকে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ সব কথাই কিন্তু অতি সরল করে বলা। আদত পরীক্ষার ফলাফল কখনোই কোনো নিখুঁত সংখ্যা উগরে দেয় না; তার সঙ্গে সর্বদা কিছু ভ্রান্তি (error) বা অনিশ্চয়তা (uncertainty)—যত ছোটই হোক না কেন—মিশে থাকে। ধরা যাক, কোনো এক তত্ত্বে বলা হল—ইলেকট্রন আর প্রোটনের আধান (charge) একে অন্যের সমান ও বিপরীত। সত্যিই তাদের আধানের মান (magnitude) নিখুঁতভাবে একে অন্যের সমান কিনা—তা কোনো পরীক্ষাই কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না! যেটুকু বলা যায়—ইলেকট্রন আর প্রোটনের আধানের মানের পার্থক্য (আমরা শুধু এদের ‘মান’ নিয়ে কথা বলছি, তাই বিয়োগ করতে কোনো অসুবিধে নেই) একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, আদতে শূন্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সংখ্যা হবে। পরীক্ষা যত সূক্ষ্ম হবে, তত্ত্বের যাচাই-ও ততই নিখুঁত হবে।
মনে রাখা দরকার, যদি কোনো তত্ত্ব, কোনো পরীক্ষার দ্বারা খণ্ডিত-ও হয়, তাকে তখনই ঘাড়ধাক্কা দেওয়া যায় না কিন্তু! একইভাবে, কোনো পরীক্ষার ফলাফল, কোনো ইতোমধ্যে-প্রমাণিত-তত্ত্বের সঙ্গে না মিললেই, তাকে ফেলে দেওয়া হয় না। যদি পরবর্তীকালের কোনো অপেক্ষাকৃত নিখুঁততর পরীক্ষায় কোনো তত্ত্ব পুরোপুরো না-ও মেলে, এবং কোনো নতুন তত্ত্বের আবির্ভাব হয়, তখনও আমরা বলি, পুরোনো তত্ত্বটি কোনো এক পর্যায়-অবধি সত্য, যার পরে আমাদের নতুন তত্ত্বটির প্রয়োজন। নিউটনের মহাকর্ষের উদাহরণটাই আবার দেখা যাক। সূত্রটি বেজায় সহজ, আর মহাকাশের সমস্ত জ্যোতিষ্ককেই দেখা গেছে এই সূত্র মেনে চলতে; অতএব, এই নিয়ম মেনে আমরা নিখুঁতভাবে গ্রহণের সময়ের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি। কিন্তু দেখা গেল, বুধ গ্রহটি নিজের কক্ষপথে যেভাবে চলে, তার সঙ্গে নিউটনের সূত্রের ভবিষ্যদ্বাণীর খুব ছোট্ট একটা পার্থক্য মাপা যাচ্ছে। পার্থক্যটি খুবই ছোট হলেও, নিশ্চিতভাবেই আছে, অতএব, নিউটনের তত্ত্বের পরিবর্তনের/পরিমার্জনের প্রয়োজন দেখা দিল। এই পরিমার্জনের কাজটি করল আইনস্টাইন-প্রণীত আধুনিক মহাকর্ষের তত্ত্ব, আর তার পক্ষে বুধের গতিপথের সেই পার্থক্যের ব্যাখ্যা করাও সম্ভব হল। এর মানে কি নিউটনের তত্ত্ব ভ্রান্ত? মোটেই না! এর মানে হল, কিছু খুবই চরম পরিস্থিতিতে—যেখানে আমাদের মহাকর্ষের অঙ্ক কষায় অতি সূক্ষ্মতার প্রয়োজন (যেমন কিনা, মোবাইলের জিপিএস-ট্র্যাকিংয়ের সময়)—নিউটনের সহজ তত্ত্বটি ব্যবহার করার আগে তার সামান্য পরিমার্জন প্রয়োজন।
এরকম সব উদাহরণ থেকে বিজ্ঞানীরা নতুনতর তত্ত্ব তৈরি করার একটা ছকও পেয়েছেন: দুনিয়ার সবথেকে জ্ঞানী, সফল, মহান বিজ্ঞানীরাও তাঁদের তত্ত্ব নির্মাণের সময় ভুল করতে পারেন, তাঁদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে, তাঁদের তত্ত্বগুলিকে পরিমার্জন—এমন কি দরকারে সম্পূর্ণ বাতিল—করারও দরকার হতে পারে। তবে কিনা, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, তাঁদের তত্ত্বগুলির সংস্কারের প্রয়োজন হচ্ছে, কারণ, পূর্বের আহৃত তথ্য, অর্থাৎ যেসব পরীক্ষা থেকে তাদের পাওয়া গেছে, সেগুলি যথেষ্ট নিখুঁত নয়। অতএব, যেকোনো নতুন তত্ত্বের প্রতি আমাদের প্রথম দাবি হয়—আগে পূর্বের সব পরীক্ষালব্ধ তথ্যের ব্যাখ্যা করে দেখাও। খুবই অল্প কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, চলতি ধ্যানধারণার সম্পূর্ণ পরিবর্তনের (paradigm shift) ফলে এটা সম্ভব হয় না। এমন একটি উদাহরণ হল—গত শতকের প্রথমার্ধে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উদ্ভব। উপপারমাণবিক কণাদের জগতে নিউটনের বলবিদ্যার প্রয়োগ নেহাতই অসম্ভব। কিন্তু তখনও, প্রাসঙ্গিক কণার আকার যথেষ্ট বড় হলেই, আবার আমরা নিউটনের তত্ত্বের প্রমাণ ফিরে পাই। একটি ক্রিকেট বল নিশ্চিতভাবেই নিউটনের গতিসূত্র মেনে চলে, তার জন্যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে ডাকার দরকার হয় না।
বিজ্ঞানের সব শাখার মধ্যেই একটি মিল আছে: জ্ঞানার্জনই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য হল এই জগৎ আর তার ভেতরের কল-কব্জার খবর জানা; সেই জানার পথে চালিকাশক্তি হল কৌতূহল আর অনুসন্ধান। গণিতসহ বিজ্ঞানের সমস্ত শাখাই, কঠোর যুক্তির শৃঙ্খলা মেনে চলে। সেই যুক্তির গোড়ার বিচার-বিবেচনা হয়তো আসে পরীক্ষা আর পর্যবেক্ষণ থেকে, বা কোনো তত্ত্ব থেকে। কোনো এক ধাপ/প্রসঙ্গ থেকে সকলেই শুরু করে, আর তারপর সকলকেই কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। এই যে সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছনো—এর দুটি পথ:
আরোহী যুক্তি (Inductive Logic):
যুক্তির এই ধারায়, প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণের সাহায্য নিয়ে কোনো এক সাধারণ সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হয়। বর্ণনামূলক (descriptive) বিজ্ঞানে এর দেখা মেলে বেশি। একজন জীববিজ্ঞানী (biologist) নানারকম তথ্য আহরণ ও তাদের নথিবদ্ধ করেন। এই তথ্যগুলি গুণধর্মী (qualitative) বা সংখ্যাধর্মী (quantitative) – দুই-ই হতে পারে এবং এই কাঁচা তথ্যের সঙ্গে জুড়তে পারে অনেক মিশ্র চরিত্রের তথ্য, যেমন, আঁকা ছবি, স্থিরচিত্র বা চলচ্চিত্র। এই নানাবিধ তথ্য-প্রমাণ থেকে বিজ্ঞানী তাঁর সিদ্ধান্ত (প্রস্তাবনা) গড়ে তুলতে পারেন। আরোহী বিচারের কর্মপদ্ধতি হল—সময় নিয়ে, সযত্ন পর্যবেক্ষণের ফলাফল আর প্রভূত পরিমাণ তথ্যের বিশ্লেষণ করে কিছু সাধারণীকৃত (generalized) সিদ্ধান্ত নির্মাণ করা। মস্তিষ্কের গবেষণা থেকে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। জীবিত মানুষদের নানারকম নির্দিষ্ট কাজে ব্যস্ত রেখে (যেমন ধর, নানারকম খাবারের ছবি দেখতে দিয়ে), সেই সময়ে তাদের মস্তিষ্কের পর্যবেক্ষণ করা হয় এই ধরনের গবেষণায়। এই বিশেষ কাজটির সময় মস্তিষ্কের যে অংশে ‘আলো জ্বলে ওঠে’, বিজ্ঞানীরা প্রস্তাব দেন, যে, সেই অংশটিই ওই বিশেষ উদ্দীপকের উপস্থিতিতে (এক্ষেত্রে খাবারের ছবি) আমাদের প্রতিক্রিয়ার জন্যে দায়ী। এইবারে, এই প্রস্তাব অনুযায়ী, মস্তিষ্কের ওই বিশেষ অংশে উদ্দীপনার সঞ্চার করে দেখা হয়—একইরকম প্রতিক্রিয়ার জন্ম হচ্ছে কিনা।
অনেকগুলি আলাদা অথচ নির্দিষ্ট ঘটনা থেকে আরোহী যুক্তির সাহায্যে একটি সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। স্বভাবতই, এই ধরনের বিচারের জন্যে তথ্য-প্রমাণের প্রয়োজন। কোনো প্রস্তাবনা যদি আদতে ভালো হয়, তবে পূর্বানুমানগুলি প্রায় সর্বদাই সেটিকে কিছুমাত্রার সমর্থন (degree-of-support) করে; এই সমর্থনের মাত্রা কোনো গাণিতিক মানদণ্ডেও (numerical scale) মাপা সম্ভব। কীভাবে? যে সমস্ত পূর্বাবস্থা সত্য হলে আহৃত তথ্য থেকে পাওয়া সাক্ষ্য সত্য হয়—তেমন সমস্ত সম্ভাবনাকে হিসেবের মধ্যে আনলে, উপনীত সিদ্ধান্তটি যদি (অন্তত) তার কিছু ভগ্নাংশ r-এ সত্য হয়, তবে r-কে ওই সিদ্ধান্তের সপক্ষে ‘যুক্তির জোর’ (support strength)-এর একটি গাণিতিক মান ভাবা যেতে পারে। একটা উদাহরণ দিয়ে এই জটিল ভাষাকে কিছু সহজ করা যায় কিনা দেখা যাক: ধরা যাক, ১০০০ খানা কালো কাক পরপর দেখে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, যে, সব কাকই কালো (এক হাজারে ওই হাজারই; r= ১০০০/১০০০ = ১)। একটিও সাদা কাক দেখতে পাওয়ামাত্র এই সিদ্ধান্তের ‘সপক্ষে সমর্থন’/ ‘সম্ভাবনা’ (probability) r, ১-এর থেকে কমে যাবে। ১-এর যত কাছাকাছি হবে ওই সংখ্যা, এই ‘সাধারণ সিদ্ধান্ত’টি ততটাই জোরদার হবে। কাকের পালকবর্ণের এই সমস্যায় ধরা যাক, r= ০.৯৯৯৯৯৯—সেক্ষেত্রে “সব কাকই কালো” বক্তব্যটি খুবই জোরদার।
আরোহী যুক্তির ব্যবহার বিজ্ঞানে সর্বত্র, কারণ প্রায়শই আমরা বিশেষ কিছু পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা থেকে সাধারণ কোনো সিদ্ধান্ত বা বিশ্বজনীন কোনো সূত্রে পৌঁছনোর চেষ্টা করি। নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র থেকে ডারউইনের বিবর্তনবাদ—সর্বত্র এইরকম উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। ‘ব্যতিক্রম’-এর উপস্থিতিতে এই ধরনের যুক্তি নিজেকে পরিবর্তন করে, আর এই কারণেই বিজ্ঞানের প্রগতি হয়। কোটি কোটি বিলিয়ার্ড বলকে আমরা একে অন্যের সঙ্গে গুঁতো খেতে দেখেছি গোটা ইতিহাস-জুড়ে। এর ফলে, ‘বিলিয়ার্ড-বলবিদ্যা’য় আমাদের যে পারদর্শিতা—অর্থাৎ তা নিয়ে আরোহী যুক্তি—তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে গিয়ে আমরা যদি ইলেকট্রনের সঙ্গে ইলেকট্রনের গুঁতোগুঁতির আখড়ায় (ইলেকট্রন বিক্ষেপ—electron scattering) ফেলি, দেখবো, আমাদের প্রস্তাবের সঙ্গে বাস্তব মোটে মিলছে না, ব্যতিক্রমের উদ্ভব হয়েছে, অতএব, আমাদের এই সূত্র এবার বদলাতে হবে। আগেও বলেছি—এর ফলে কিন্তু বিলিয়ার্ড বিক্ষেপের বেলায় আমাদের যুক্তিজাল মিছে হয়ে গেল না—কেবল বোঝা গেল, অতিক্ষুদ্র কণা, যেমন ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন কোনো সূত্র খুঁজে বের করতে হবে।
বিজ্ঞানে পরীক্ষানিরীক্ষার গুরুত্ব ঠিক এই কারণেই অপরিসীম। আরোহী বিবেচনা ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান অচল, আর এরকম যুক্তি সব সময়েই কোনো না কোনো পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে।
অবরোহী যুক্তি (Deductive Logic):
অবরোহী বিবেচনায় চিন্তার ধারা আরোহী চিন্তার উলটোদিকে বয়। এক্ষেত্রে, কোনো সাধারণ সূত্র বা সিদ্ধান্ত থেকে বিশেষ কোনো ফলাফলের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। সাধারণ সিদ্ধান্তগুলি যতক্ষণ সঠিক বলে মানা হচ্ছে, বিজ্ঞানী ততক্ষণ ওই বিশেষ সিদ্ধান্তগুলিকেও সত্য বলে মানতে পারেন। আবহবিজ্ঞান, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন (climate change)-এর চর্চা থেকে উদাহরণ এনে বলা যায়, ধরা যাক বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করলেন—যদি কোনো একটি অঞ্চলের জলবায়ুর উষ্ণতা বাড়ে, তবে সেই অঞ্চলের প্রাণী ও উদ্ভিদের অনুপাত ও বাস্তুতন্ত্রের বিন্যাস বদলে যাবে। এমন পূর্বাভাস সত্যিই করা হয়েছে বহুবার, তারপর তাদের যাচাইও করা হয়েছে, বহু প্রমাণও পাওয়া গেছে এইরকম পরিবর্তনের, যেমন— পরিবেশের গড় উষ্ণতার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবাদি জমির বণ্টনেরও পরিবর্তন দেখা গেছে।
মনে আছে তো, আরোহী যুক্তিতে, পূর্বানুমানকে সত্য ধরে উপনীত সিদ্ধান্তটির ‘সম্ভাবনা’ ভগ্নাংশ হয়? অবরোহী যুক্তিতে ঠিক তার উলটো। সার্থক অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে, পূর্বানুমানগুলির সত্যতা নিশ্চিত করে, যে, উদ্ভূত সিদ্ধান্তটি সঠিক। একে আমরা ‘যৌক্তিক ফলাফল’ (logical entailment) বলবো। এই সাধারণ সিদ্ধান্ত থেকে বিশেষ সিদ্ধান্তের উদ্ভবের একটা উদাহরণ দেওয়া যাক: দুটিমাত্র পূর্বশর্ত ধরা যাক—মানুষ মরণশীল আর ‘ক’-বাবু একজন মানুষ। মাত্র এই দুই শর্ত যদি সত্য হয়, তবে একটি অকাট্য সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারি—‘ক’-বাবু মরণশীল। এর যেকোনো একটি শর্তকেও যদি ফেলে দিই, ধরা যাক দ্বিতীয়টি, তাহলেই আর এই সিদ্ধান্তটির সম্ভাবনা ১০০% থাকে না—‘ক’-বাবু একজন অমর রোবট হতেই পারেন! যেকোনো অধীত বিষয়ের প্রাথমিক নীতিগুলি এইরকম কিছু পূর্বানুমান। এদের কোনোভাবে অঙ্ক কষে প্রমাণ করা যায় না, কিন্তু এদের সত্য বলে ধরে নিলে, উদ্ভূত অবরোহী সিদ্ধান্তগুলি যাচাই করার মাধ্যমে এদের সার্থকতা প্রমাণ করা যায়। অবশ্যই, এরা মোটেই যেমনতেমন করে তৈরি হয় না। কোনো বিশেষ যৌক্তিক পথে বা কোনো পরীক্ষালব্ধ ফল থেকে শুরু করেই এই ধরনের প্রাথমিক নীতিমালা বা স্বতঃসিদ্ধে পৌঁছনো যায়। নিউটনের গতিসূত্রগুলি হল ধ্রুপদী/শাস্ত্রীয় বলবিদ্যা (classical mechanics)-র প্রাথমিক সূত্র, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রথম সূত্র হল শ্রোয়েডিঙ্গারের সমীকরণ। অনেক সময় একাধিক সমতূল্য প্রথম সূত্র পাওয়া যায়, কিন্তু যে কোনো একটিকে সত্য বলে ধরলে, অন্য সবক-টি তার থেকে প্রমাণ করা সম্ভব। উদাহরণ? হাইজ়েনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্র আর শ্রোয়েডিঙ্গারের সমীকরণ – দুইকেই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রথম সূত্র হিসেবে ভাবা যায়।
‘প্রতিটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’—সাধারণ পূর্বানুমান। এর থেকে অবরোহী যুক্তির মাধ্যমে উপনীত বিশেষ সিদ্ধান্ত—‘গুলি চললে বন্দুকের পশ্চাদপসরণ হয়’। অবরোহী যুক্তির বিখ্যাততম উদাহরণ হল—ইউক্লিডের জ্যামিতি। কিছু অসংজ্ঞায়িত শব্দ, যেমন বিন্দু, রেখা, ইত্যাদি এবং পাঁচটি প্রাথমিক নীতি বা স্বতঃসিদ্ধের সমন্বয়ে এই জ্যামিতি নির্মিত। এই ক-টিমাত্র জিনিস থেকে পুরো জ্যামিতির সমস্ত উপপাদ্য ও অনুসিদ্ধান্ত অবরোহী যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়। প্রথম চারটি স্বতঃসিদ্ধ নেহাতই সাধারণ (এই ক-টির অনুপস্থিতিতে ‘জ্যামিতি’র কল্পনা করাও কঠিন):
- যে কোনো দুটি বিন্দুর মধ্যে একটি সরলরেখা টানা সম্ভব।
- একটি সরলরেখাকে দুদিকেই অসীম পর্যন্ত টেনে লম্বা করা যায়।
- যেকোনো বিন্দুকে কেন্দ্র করে, যে কোনো দৈর্ঘ্যের ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকা সম্ভব।
- সব সমকোণই একে অপরের সঙ্গে সমান। পাঁচ নম্বর স্বতঃসিদ্ধটি একটু অন্যরকমের:
- দুটি সমতলীয় সরলরেখাকে যদি তৃতীয় কোনো সরলরেখা ছেদ করে, আর তৃতীয় রেখাটির একই পার্শ্বের দুটি অন্তর্বর্তী কোণের যোগফল যদি দুটি সমকোণের মানের চেয়ে কম হয়, তবে প্রথম দুটি সরলরেখাকে এই ‘কম’ অন্তর্বর্তী কোণের দিকে বর্ধিত করলে, তারা অসীমের আগেই মিলিত হবে।
এই পূর্বানুমানগুলিকে একবার সত্য বলে ধরে নিলে (প্রথম চারটির ক্ষেত্রে সত্য না হওয়াই কঠিন), ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সম্পূর্ণ পুনর্নির্মাণ সম্ভব। এই সেদিন, ঊনবিংশ শতকে দেখানো গেছে, যে পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটি ছাড়াই একটা গোটাগুটি জ্যামিতি বানানো সম্ভব—এই সব ধরনের জ্যামিতিকে একসাথে অ-ইউক্লিডীয় (non-Euclidean) জ্যামিতি বলে। এই শেষের অনুমানটি বলে—একটি ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০° (বা দুই সমকোণ) হয়, কিন্তু একটি গোলকের ওপর ত্রিভুজ আঁকার চেষ্টা করলে দেখতে পাবে, তিনটি কোণের যোগফল সর্বদাই ১৮০°-র বেশি হবে। এটি অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির একটা উদাহরণ।
অবরোহী যুক্তিকে সাধারণত তিনটি যৌক্তিকভাবে সংযুক্ত বক্তব্য-শৃঙ্খলের (\(A\), \(B\), \(C\)) মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়: যদি \(A\) থেকে \(B\)-কে বোঝানো যায় এবং যদি \(B\) থেকে \(C\)-কে বোঝানো যায়, তবে \(A\) থেকে \(C\)-কে বোঝানো যাবে। এই শৃঙ্খলটি যত ইচ্ছে বাড়ানো সম্ভব। একটা উদাহরণ দেখা যাক: \(A\): আকাশ মেঘলা, \(B\): রাতে বেশ গরম, \(C\): ঘুমোনো কঠিন। শৃঙ্খলটি হল: যদি আকাশ মেঘলা থাকে, তবে রাতে গরম পড়ে; যদি রাতে গরম পড়ে, তবে আমরা ঘুমোতে পারি না। এর থেকে বোঝা যায়: আকাশ মেঘলা থাকলে আমরা ঘুমোতে পারি না। খেয়াল করে দেখো, \(A\) থেকে \(B\) বোঝানো গেলেই, \(B\) থেকে যে \(A\) বোঝানো যাবে, তা কিন্তু নয়! ‘রাতে গরম পড়েছে, অতএব আকাশ মেঘলা’—এই অনুসিদ্ধান্ত ঠিক হওয়ার কোনো কারণ নেই—গ্রীষ্মকালের নির্মেঘ রাতও গরমই হয়! উলটোদিকে, \(A\) থেকে \(B\) বোঝানো গেলে, \(B\)-এর নঞর্থক বক্তব্য থেকে \(A\)-কে বোঝানো যায়: যদি রাত বেশ ঠান্ডা হয়, তবে আকাশ নির্মেঘ আছে। নঞর্থক \(A\)-কে A-এর মাথায় অনুভূমিক দাগ দিয়ে বোঝানো হয় (\(\bar{A}\); পড়বো - 'A বার')। বুলিয়ান (Boolean) বীজগণিতের পড়ুয়ারা এই ধরনের চিহ্নের সঙ্গে পরিচিত।
বিজ্ঞান ও যুক্তির সম্পর্ক:
একটি সার্থক প্রকল্পকে যাচাইযোগ্য (testable) হতে হয়। একে মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্য (falsifiable)-ও হতে হয়, অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে একে যেন মিথ্যা প্রমাণ করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা হল, বিজ্ঞান কোনোকিছু ‘প্রমাণ’ করার চেষ্টা করে না, বৈজ্ঞানিক সত্য সদাই—উপযুক্ত তথ্যের উপস্থিতিতে—পরিবর্তনযোগ্য। এই ‘অসঙ্কোচে চলতি ধারণাকে ভুল প্রমাণ করা’-র বৈশিষ্ট্যই বিজ্ঞানকে থেকে অবিজ্ঞান-এর থেকে আলাদা করে। অতি-প্রাকৃত (supernatural)-এর উপস্থিতি যেমন, না যাচাই করার যোগ্য, না মিথ্যা প্রমাণ করা সম্ভব।
কীভাবে প্রকল্পকে যাচাই করা সম্ভব? এক বা একাধিক প্রকল্পকে নাকচ করতে একজন গবেষক সাধারণত এক বা একাধিক নির্দিষ্ট পরীক্ষা নির্মাণ করেন। প্রতিটি পরীক্ষার সঙ্গে এক বা একাধিক পরিবর্তনশীল এবং এক বা একাধিক নিয়ন্ত্রক (control) অংশ যুক্ত থাকে। পরিবর্তনশীল অংশের সঙ্গে সাধারণত একটি করে চলরাশি (variable) সংযুক্ত, যা পরীক্ষাচলাকালীন বদলাতে পারে। নিয়ন্ত্রক অংশটির অবস্থা হুবহু পরিবর্তনশীল অংশটির মতো, কেবল ওই চলরাশি(গুলি) বাদে। এইরকম নির্মাণের কারণ, যদি পরীক্ষাচলাকালীন চলরাশিটি বদলায়, তবে নিশ্চিত হওয়া যাবে, প্রকল্পটির কারণেই তেমন হয়েছে, বাহ্যিক অন্য কোনো কারণে নয়।
প্রকল্পভিত্তিক (hypothesis-based) বিজ্ঞানে অবরোহী যুক্তির, আর বর্ণনাত্মক/আবিষ্কারধর্মী (descriptive or discovery-based) বিজ্ঞানে আরোহী যুক্তির ব্যবহার হয়। বর্ণনাত্মক বিজ্ঞানের লক্ষ্য মূলত পর্যবেক্ষণ, অন্বেষণ ও আবিষ্কার। প্রকল্পভিত্তিক বিজ্ঞান—এক বা একাধিক নির্দিষ্ট প্রশ্ন ও তার সম্ভাব্য, যাচাইযোগ্য উত্তর থেকে শুরু হয়; অর্থাৎ, একটি সাধারণ বক্তব্য থেকে একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।
বাস্তবে, এই দুই ধরনের—বর্ণনাত্মক আর প্রকল্পভিত্তিক—বিজ্ঞানের মধ্যের সীমা প্রায়শই মুছে যায়; অধিকাংশ গবেষণায় এই দুই ধরনের বিজ্ঞানেরই প্রয়োগ হয়। ফলত, জ্ঞানার্জনের পথে বিজ্ঞানীরা দুই ধরনের (আরোহী ও অবরোহী) যুক্তিরই ব্যবহার করেন। দুরকম প্রক্রিয়ার বিভাজনের সীমা মুছে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন বোঝা যায় কত সহজে পর্যবেক্ষণ থেকে সরাসরি নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরে পৌঁছনো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, এক ভদ্রলোক ১৯৪০ সালে খেয়াল করলেন, তাঁর জামাকাপড়ে ও তাঁর কুকুরের লোমে আটকে থাকা চোরকাঁটা-র কাঁটাগুলি আসলে অতিক্ষুদ্র হুক-এর মতো। আরও তলিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তিনি দেখতে পেলেন, যে এই ধরনের হুকের আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা জ়িপার (জামাকাপড়ের চেন)-এর থেকেও বেশি। অচিরেই তিনি একটি কোম্পানি স্থাপন করলেন, যারা হুক আর ফাঁস দিয়ে তৈরি বন্ধনী নির্মাণ করে; এই বন্ধনীকেই আমরা বর্তমানে ভেলক্রো বলে চিনি। এটি একইসঙ্গে প্রথমে আবিষ্কারধর্মী আর পরের ভাগে প্রকল্পভিত্তিক বিজ্ঞানের ব্যবহারের প্রাঞ্জল উদাহরণ।
বিজ্ঞানের যেকোনো বিবৃতিকে যুক্তির রাস্তা—সে প্রস্তাবনাই হোক বা অবরোহী—ধরেই চলতে হয়; এর কোনোটি থেকেই যে বক্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব নয়, তা যার যা-ই হোক, বিজ্ঞান নয়। এই যৌক্তিক ধারা, যেকোনো সিদ্ধান্তকে মিথ্যা প্রমাণ করার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখে। যে বক্তব্য মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্য নয়, তা আসলে ফাঁপা—বিজ্ঞান হওয়ার উপযুক্ত নয়। তাই “বিষ খেলে তুমি মারা যাবে” একটি বিজ্ঞানসম্মত বক্তব্য, যার ভিত্তি আরোহী যুক্তিতে স্থাপিত; কারণ, পর্যবেক্ষণের ফলেই—“যদি কোনো ব্যক্তি বিষ খায়, সে মারা যায়”—এই বক্তব্যটির সত্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কিন্তু “সবই পূর্বনির্ধারিত, নিয়তিই সব” কোনো বিজ্ঞানসম্মত বক্তব্য নয়, কারণ কোনোভাবেই একে মিথ্যা প্রমাণ করা সম্ভব নয়; এটি একটি ধোঁয়াটে ‘দার্শনিক’ কথামাত্র। এইজন্যেই, বিজ্ঞানে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পদ্ধতিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সমান গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, শুধু যে যুক্তি কীভাবে কাজ করেছে তা দেখায়, তা নয়, পরবর্তী বিজ্ঞানীদের একই ফলাফলে পুনর্বার পৌঁছতেও সাহায্য করে। পুনর্নির্মাণযোগ্যতা (reproducability) বিজ্ঞানের একটি অত্যাবশ্যক শর্ত। ‘ফার্মা-র শেষ উপপাদ্য’ একটা ভাল উদাহরণ। পিয়ের দ্য ফার্মা (Pierre de Fermat), ১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে, একটি বই পড়ার সময়, বইটির মার্জিনে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্যের উল্লেখ করে বলেন, যে, উপপাদ্যটির প্রমাণের তুলনায় মার্জিন কিঞ্চিৎ ছোট হয়ে যাওয়ায় তিনি আর প্রমাণটি লিখছেন না। সাড়ে তিনশো বছর পরে, ১৯৯৪ সালে, অ্যান্ড্রু ওয়াইল্স (Andrew Wiles) উপপাদ্যটি অবশেষে প্রমাণ করেন এমন সব নীতির প্রয়োগে, যা ফার্মার জীবদ্দশায় জানাই ছিল না! এই কারণেই, ওয়াইল্স-কেই ওই উপপাদ্যের প্রমাণের জন্যে সম্মান দেওয়া হয়, ফার্মা-কে নয়। (উপপাদ্যের বিবৃতি? এমন কোনো পূর্ণসংখ্যা-ত্রয়ী, \(a\), \(b\), \(c\) খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, যাতে \(a^n + b^n = c^n\) সমীকরণটি সিদ্ধ হয়, যেখানে \(n>\) ২)।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে বড় বেশি কঠিন, অনমনীয় মনে হচ্ছে? মনে রেখো, যদিও বিজ্ঞানীরা অধিকাংশ সময়েই এই রীতিনীতি মেনে চলেন, এর কিছু নমনীয়তাও আছে। আদতে, বিজ্ঞানের রীতিনীতি বাস্তবে এর থেকে অনেক বেশি জটিল। কখনো কোনো পরীক্ষার ফল থেকে আমরা এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছই, যাতে চলতি ধারণার আমূল পরিবর্তন হয়; আবার কখনো কোনো পরীক্ষার ফল আরও একরাশ আনকোরা প্রশ্নের জন্ম দেয়। অনেকসময়েই বিজ্ঞান এই লেখায় বর্ণিত সরল পথে চলে না; বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত অনুমিতি (inference) নির্ধারণ আর সিদ্ধান্তের সাধারণীকরণ (generalization) করেন, গবেষণা যত এগোয়, তত তার ফলাফলকে চেনা-অচেনা ছাঁচে ফেলার চেষ্টা করেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি-র এই বর্ণনা থেকে যেমন মনে হলো, সত্যিকারে বিজ্ঞানের বিচার-বিবেচনার পদ্ধতি তার থেকে অনেক জটিল। তবে আরও একটা ব্যাপার খেয়াল রেখো—এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শুধু বিজ্ঞানের সমস্যাই নয়, জীবনের অন্য অনেক ধরনের সমস্যারও সমাধান করতে সক্ষম।
No comments
মন খুলে মন্তব্য করুন। আমাদের সময়-সুযোগ মতো মডারেশন হয়, তাই মন্তব্য এই পাতায় ফুটে উঠতে কিছু সময় লাগতে পারে। নইলে নিশ্চিন্ত থাকুন, খুব খারাপ কিছু বা স্প্যাম না করলে, মন্তব্য ঠিক বেরোবে এই পাতায়।